নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শোক, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় শেষ বিদায় জানানো হলো বরেণ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানকে।
জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউতে অনুষ্ঠিত জানাজা শেষে তার সহকর্মী, বন্ধু, ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে শেষ বিদায় জানান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার শ্রদ্ধা জানান৷
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বরেণ্য এই সাংবাদিককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ)।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, তিনি অনেক বরেণ্য সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন অকুতোভয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে এই নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংবাদিক নেতা, রাজনৈতিক নেতা এবং তার সহকর্মীরা অংশ নেন। এর আগে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে তার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আনা হয়। জানাজা নামাজ শেষে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের সাংবাদিক ও তার সহকর্মীরা।
জানাজা নামাজের আগে তাকে স্মরণ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, পীরের মৃত্যু নিঃসন্দেহে আকাল মৃত্যু। কারণ তার বয়স হয়েছি মাত্র ৫৭ বছর। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ছিলেন। তার বিদেহী আত্মার জন্য আমরা প্রার্থনা করি।
কান্না জড়িত কন্ঠে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, পীর হাবিবুর রহমান সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি তার নীতি ও আদর্শের অটল ছিলেন। তার অগনিত পাঠক আছেন, যারা তার কলামের জন্য অপেক্ষা করতেন। তারাও তাদের কলামিস্টকে হারালেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অতি আপনজন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য পীর হাবিবুর রহমানকে চির বিদায় জানাচ্ছি। এই বিদায় হয়তো আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু আমাদের মনে থাকবেন তিনি। তিনি তার লেখনীর মাঝে থাকবেন। তিনি যেটা বিশ্বাস করতেন, তার নীতি আদর্শের ব্যাপারে অটল ছিলেন। এরকম একজন সাহসী সাংবাদিকে আমরা হারয়েছি। এতে আমাদের যেমন ক্ষতি, তেমনি সাংবাদিকতার জন্যও ক্ষতি। তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে লড়ছেন। সব সময়ের সাহসী উচ্চারণ করেছেন।
পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে ব্যারিষ্টার অন্তর বলেন, আমার পরিবারের সবার জন্য আমার বাবা ছায়া হিসেবে ছিলেন। তিনি থাকলে মনে হতো সব হয়ে যাবে। আমি আমার ছায়াকে হারালাম। বাবা বলতো আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। আমার মৃত্যুর পর আমাকে শহীদ মিনার এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিয়ে যেও। বাবা মানুষের জন্য লিখতে চেয়েছেন। সেই সাহাসিকতা তার ছিলেন। অনেক কিছু সহ্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় মানুষ আশা করতেন বাবা অনেক কিছু লিখবেন। হয়তো উনার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। উনি পারেন নাই। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ যেন উনাকে বেহেশতে নসিব করেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নেতা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে তার কলম সবসময় বলিষ্ঠ ছিল। চেতনাকে ধারণ করতে গিয়ে তিনি বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু কখনো কলমকে আত্মসমর্পণ করেননি। তার লেখনীর ভিতর অনেক আপন জনের বিরুদ্ধেও সুস্পষ্টভাবে সমালোচনা করতে কোন দ্বিধা করেননি।
এ সময় সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, এডিটর গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাইফুল আলম প্রমুখ জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি, এডিটর্স গিল্ড, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, দৈনিক দেশ রূপান্তর, সকালের সময়, ভারতীয় হাইকমিশনসহ অন্যান্য সংগঠন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ নিয়ে আসা হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে-ডিআরইউ। সেখানে সহকর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা আগে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুসহ সংগঠনের নেতারা ।
জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সাংবাদিক জগতের একজন পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন একজন কঠিন কলমযোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ না করে তিনি আমাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে চলে যাবেন আমরা ভাবতেও পারিনি। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের জন্য, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য, রাষ্ট্রবিরোধীদের জন্য তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন কলমযোদ্ধা। তিনিই গণ মানুষের পক্ষে একজন ছিলেন, কিন্তু স্বপ্নের সন্ধানে ছিলেন। তিনি আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা দুজন দুই অঙ্গনে কাজ করলেও তিনি আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। সব মিলে মিলে একটি বেদনাবিধুর দিন আজকে পার করছি। তিনি একজন দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলাম লেখক ছিলেন। পীর হাবিবুর রহমান এদেশের জন্য, দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাঁর ছিল গভীর শ্রদ্ধা। এই চির বিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।